কোলাহলপূর্ণ ইমার্জেন্সি রুম থেকে , যেখানে সংকটের মুহুর্তে জীবন রক্ষা করা হয়, প্রসূতি ওয়ার্ডের নির্মল করিডোর পর্যন্ত, যেখানে প্রতিদিন নতুন জীবন পৃথিবীতে প্রবেশ করে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ডায়াবেটিক হাসপাতাল শব্দের প্রতিটি অর্থে নিরাময়ের জায়গা।
আমাদের ভিশন এবং মিশন
ডায়াবেটিস একটি বিপাকজনিত রোগ। মানুষের শরীরে ইনসুলিন নামের হরমোনের সম্পূর্ণ বা আপেক্ষিক ঘাটতির কারণে বিপাকজনিত গোলযোগ সৃষ্টি হয়ে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং এক সময় তা প্রস্রাবের সঙ্গে বেরিয়ে আসে। এই সামগ্রিক অবস্থাকে ডায়াবেটিস বলে। ডায়াবেটিস ছোঁয়াচে বা সংক্রমক কোন রোগ নয়।
ডায়াবেটিস একটি মহামারী রোগ। বাংলাদেশের প্রায় পৌনে এক কোটি মানুষ এ রোগে আক্রান্ত। বিশ্বে প্রতি বছর ৩ লক্ষাধিক নতুন রোগী সনাক্ত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতে, ডায়াবেটিস প্রতিরোধে এখনই ব্যবস্থা না নিলে ২০৪০ সালে দেশে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা ১ কোটি ৩৪ লক্ষে পৌঁছে যাবে। এ দেশের বিপুল সংখ্যক বালক- বালিকাও ডায়াবেটিস ঝুঁকিতে রয়েছে। এছাড়া পৃথিবীতে গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের হার বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।
ডায়াবেটিসের কারণে বিশ্বে ৭ সেকেন্ডে একজন মৃত্যুবরণ করছে এবং প্রতি ১২ জনে একজন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। বাংলাদেশে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত প্রতি ২ জনের মধ্যে ১জন জানেন না যে তিনি এ রোগে আক্রান্ত ।
ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞরা জানান, পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট উদ্যেগী এবং বিভিন্ন মাত্রায় সফল। কিন্তু বাংলাদেশের চিত্র ভিন্ন। অর্থাৎ বাংলাদেশের ডায়াবেটিস রোগীরা তুলনামূলক খারাপ অবস্থায় জীবন যাপন করছে।
ডায়াবেটিক এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর তথ্যমতে দেশে ৭৫ লাখের বেশী ডায়াবেটিস রোগী আছে। যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়েছেন তাদের মধ্যে ৫০ থেকে ৬০ ভাগ মানুষকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। বাকীদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। সবাইকে শনাক্ত করা সম্ভব হলে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বাড়বে। বাডাস সূত্রে জানা গেছে বাংলাদেশে জীবনযাত্রার পরিবর্তনের কারণে ডায়াবেটিস রোগী বাড়ছে। মানুষ সচেতন হলে ৭০ শতাংশ ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা সম্ভব।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ ডায়াবেটিক সমিতির নির্বাহী কমিটির সদস্যবৃন্দ, চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছে মানব হিতৈষী ও বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির প্রতিষ্ঠাতা জাতীয় অধ্যাপক মরহুম ডাঃ মোহাম্মদ ইব্রাহিমকে, যাঁর অসামান্য উদ্যেগের কারণে এ দেশের লক্ষ লক্ষ রুগী মরণব্যাধী ডায়াবেটিসের চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন। এছাড়াও চাঁপাইনবাবগঞ্জ ডায়াবেটিক সমিতির প্রতিষ্ঠাতা, প্রয়াত হয়েছেন তাঁদেরকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে তাঁদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছে।
সদস্যবৃন্দ, যাঁরা
চাঁপাইনবাবগঞ্জ ডায়াবেটিক সমিতিতে নিবন্ধিত রোগীর সংখ্যা পুরুষ ৩২৫৮০ জন মহিলা ৩৫৭২০ জন সর্বমোট ৭১,২০০ জন। বর্তমানে ডায়াবেটিক রোগ নির্ণয় তৎসঙ্গে ডায়াবেটিক রোগী সংক্রান্ত কিছু কিছু জটিলতা নির্ণয়ের সংসামান্য সুযোগ সম্বলিত আধুনিক ল্যাবরেটরী রয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ ডায়াবেটিক সমিতি এখন শুধু ডায়াবেটিক চিকিৎসা নয় বরং চিকিৎসা সেবার মান বৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য সেবামূলক আদর্শ প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা হচ্ছে। তার জন্য মনোবল ও সহযোগিতা প্রয়োজন। সমিতির মান বৃদ্ধির জন্য এখনো অনেক কাজ অসম্পূর্ণ রয়েছে।
ডায়াবেটিক সমিতিতে আগামীতে আরও চিকিৎসা সেবা ও আধুনিক অস্ত্রপ্রচার চালুর সম্ভবনা রয়েছে। ইতোমধ্যে ২টি আধুনিক অস্ত্রপ্রচার কক্ষ হাসপাতালে সংযোজন করা হয়েছে।
ডায়াবেটিস একটি জীবনব্যাপী রোগ। একে নিয়ন্ত্রণে রেখে স্বাভাবিক জীবন যাপন করা যায়। তাই আসুন আমরা সুষম খাবার গ্রহন করি, সন্তানদের ফাষ্টফুড পরিহারে যত্নবান হয় এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখি।
সমাজের অনগ্রসর, বঞ্চিত, দরিদ্র ও সমস্যাগ্রস্ত জনগোষ্ঠির কল্যাণ সাধনে সেবা, সামাজিকভাবে অবহেলিত মানুষের চিকিৎসা সেবার মাধ্যমে দুঃস্থ রোগীদের পূনর্বাসন হোক আমাদের মূল ভিষন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ ডায়াবেটিক হাসপাতাল পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল হিসেবে গড়ে তোলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ৫টি উপজেলা সহ পার্শ্ববর্তী জেলার ডায়াবেটিক রোগীদের আধুনিক চিকিৎসার দ্বার উম্মোচিত হোক |